রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৩০ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

অন্তরকে কঠিন হওয়া থেকে বাঁচানোর উপায়

মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ:
অনেক সময়ই আমরা ভালো কথা শুনি, অনেক ইতিবাচক আহ্বান শুনি। কিন্তু তাতে আমাদের অন্তর প্রভাবিত হয় না। কারণ আমাদের অন্তরের দুয়ার বন্ধ হয়ে গেছে এবং অন্তর কঠিন হয়ে গেছে। হজরত ইয়াহইয়া ইবনে মুআজ (রহ.) অন্তরকে কঠিন হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য পাঁচটি উপায় বাতলে দিয়েছেন। এগুলো হলো নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করা, সব সময় পেট খাবারে পূর্ণ করে না রাখা, শেষ রাতে ইবাদত-বন্দেগি করা, রাতের শেষভাগে আল্লাহর কাছে দোয়া ও কান্নাকাটি করা এবং নেককার লোকদের সান্নিধ্যে সময় কাটানো।

অন্তর কঠিন হয়ে গেলে আমরা জ্ঞান থেকেও আর কল্যাণ লাভ করতে পারি না। মুহাম্মদ ইবনে সিরিন (রহ.) বলেন, ‘যদি আল্লাহ কারও কল্যাণ করতে চান তাহলে তিনি তার অন্তরকে এমনভাবে তৈরি করে দেন যাতে ওই ব্যক্তি ভালো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে এবং মন্দকাজ থেকে দূরে থাকতে পারে।’

হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘অন্তরটি যদি জীবিত ও জাগ্রত থাকে তাহলে হেদায়েত পাওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট।’ কথাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ পাপ তখনই সম্পাদিত হয় কিংবা মানুষ তখনই বিচ্যুত হয় যখন তার মন আর সক্রিয় থাকে না। অন্তর মরে যাওয়ায় যেমন পাপ করার রাস্তা উন্মোচিত হয়, তেমনি বারবার পাপের পুনরাবৃত্তি হলেও অন্তর আর সক্রিয় থাকে না। কেননা, পাপ মানুষকে ভেতর থেকে খেয়ে ফেলে।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন আত্মা থেকে পরিত্রাণ চেয়েছেন, যা কখনো পরিতৃপ্ত হয় না, যা সব সময়ই আরও আরও চায়। এ কারণে আমাদের এমন একটি অন্তর লালন করা উচিত, যা অল্পতেই সন্তুষ্ট হয়। ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, ‘যদি আমরা আল্লাহর কৃতজ্ঞ ও তৃপ্ত বান্দা হতে পারি তাহলে আমাদের অবস্থা হবে বিরাট এক সম্রাটের মতো।’ অন্যদিকে ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার সহজ উপায় হলো, আল্লাহতায়ালা আমাদের যা কিছু দিয়েছেন তা

কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বিবেচনা করা।’ এ বিষয়টি অনুধাবন করা যে, আমরা যা ভোগ করি, কোনোটাই আমাদের সক্ষমতা ও যোগ্যতার কারণেই শুধু অর্জিত হয়নি। বরং আল্লাহতায়ালাই দয়া করে এগুলো আমাদের দান করেছেন। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি হাদিসও প্রণিধানযোগ্য।

হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো আদম সন্তানের কাছে যদি দুই উপত্যকাভর্তি স্বর্ণ থাকে তবু সে

তৃতীয় একটি স্বর্ণভর্তি উপত্যকা অর্জনের ইচ্ছা করবে। মাটি ছাড়া আর কিছুই তার মুখ ভর্তি করতে পারবে না। যে লোক তওবা করে আল্লাহতায়ালা তার তওবা কবুল করে নেন।’ জামে তিরমিজি : ২৩৩৭

আমাদের নফস (প্রাণ, আত্মা, সত্তা) আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে আবার আমরা নিজেরাও নফসের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে পারি। আমরা যখন নফসের প্ররোচনা ও ফাঁদে পড়ে যাই, তখন নফস আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, ‘নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং নফসের ফাঁদে না পড়ার সর্বোত্তম উপায় হলো বিভিন্ন সময় পরিস্থিতির প্রয়োজনে হালাল করা হয়েছে এমন বিষয়াবলি থেকে নিজেদের দূরে রাখা। এমনটা করতে পারলে আমরা নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখব এবং হারাম থেকে নিজেদের নিবৃত্ত রাখাও বেশ সহজ হয়ে যাবে।’

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, উম্মাহর ওপর প্রথম যে বিপর্যয় দেখা দেবে তা হলো উম্মতের সদস্যরা খাবার দিয়ে নিজেদের পেট ভর্তি করতে শুরু করবে। মূল হাদিসটি এমন হজরত উরওয়া বিন জুবায়ের (রা.) থেকে বর্ণিত। আমি আমার খালা হজরত আয়েশা (রা.)-কে বলতে শুনেছি, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাতের ওপর উম্মতের ওপর প্রথম যে বিপর্যয়টি নেমে আসবে, তা হলো লোকজন পেট ভর্তি করে খেতে শুরু করবে। আর মানুষের পাকস্থলী যখন খাবারে পরিপূর্ণ হয়ে যায় তখন মানুষের শরীরে চর্বি জমা হয়, তাদের অন্তর দুর্বল হয়ে যায় এবং নাফস শক্তিশালী হয়ে যায়। আত তারগিব ওয়াত তারহিব : ৩/১৬৭

আমাদের পেট যখন পরিপূর্ণ থাকে, আমাদের মনও তখন নফসের পরবর্তী চাহিদা পূরণে ব্যস্ত হয়ে যায়। অন্যদিকে, আমরা যখন ক্ষুধার্ত থাকি তখনো আমরা আমাদের খাবার জোগাতেই তৎপর থাকি। হজরত উমর (রা.) বলেন, ‘দরিদ্রতার সম্পর্ক হলো নিরন্তর কামনা ও প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণের সঙ্গে।’ আমরা যখন শুধু পেতেই চাই তখন নিজেদের অনেকটাই দরিদ্র ও অসহায় মনে হয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘একজন মানুষ যদি দুটো উত্তম বৈশিষ্ট্য লালন করতে পারে তাহলে আল্লাহ তার নামটি কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীল বান্দার তালিকায় শামিল করে দেন। প্রথম বৈশিষ্ট্যটি হলো সব সময় এমন মানুষদের দিকে তাকিয়ে থাকা ও লক্ষ করা যারা ধার্মিকতায় ও নেক আমলে তুলনামূলক এগিয়ে আছে। প্রয়োজনে তাদের মতো হওয়া বা হতে চাওয়া। আর দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো ওই মানুষগুলোর দিকে তাকানো যারা দুনিয়াবি সম্পদের বিবেচনায় তার চেয়ে আরও পিছিয়ে আছে। এ মানুষগুলোই আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে পারে এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করতে পারে। মূল হাদিসটি এমন হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যার মধ্যে দুটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আল্লাহতায়ালা কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীলদের মধ্যে তার নাম লিখে রাখেন। আর যার মধ্যে এ দুটি বৈশিষ্ট্য নেই, আল্লাহতায়ালা কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীলদের দলে তার নাম লিখেন না। যে ব্যক্তি ধর্মীয় বিষয়াবলি ও আমলের ক্ষেত্রে তার তুলনায় অগ্রসর লোকের দিকে দেখে এবং তার অনুসরণ করে; আর পার্থিব ব্যাপারে তার চেয়ে অনগ্রসর লোকের দিকে দেখে এবং আল্লাহতায়ালা তাকে ওই অনগ্রসর লোকদের তুলনায় যতটুকু মর্যাদা ও নেয়ামত দান করেছেন তার জন্য শোকরিয়া আদায় করে এবং আল্লাহতায়ালার প্রশংসা করে, আল্লাহতায়ালা

কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীলদের তালিকায় তার নাম লিখে রাখেন। আর যে ব্যক্তি ধর্মীয় ব্যাপারে তার চেয়ে পিছিয়ে থাকা লোকের দিকে তাকিয়ে থাকে এবং তাকে অনুসরণ করে আর পার্থিব ব্যাপারে তার তুলনায় অগ্রসর লোকের দিকে দেখে এবং তার কাছে পার্থিব সামগ্রী না থাকার কারণে আফসোস করে, আল্লাহতায়ালা তার নাম কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীল বান্দার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেন।’ জামে তিরমিজি : ২৫১২

অন্তর যদি নিষ্ক্রিয় থাকে বা নির্জীব থাকে তাহলে একজন মানুষের অন্তর কখনই আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করতে পারবে না। এ কারণে, ইমানকে ধারণ ও মজবুত করার স্বার্থে আমাদের সবারই অন্তরকে পরিশুদ্ধ করার প্রয়াস নেওয়া উচিত।

ভয়েস/আআ/সূত্র: দেশ রূপান্তর

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION